বিশ্বনন্দিত ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, মুসলিম উম্মাহর বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর, আন্তার্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার, থিংকার, লেখক-গবেষক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর, সাবেক সফল মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। আল্লাহ প্রদত্ত অসংখ্য মেধার একটি প্রস্ফুরণ তিনি। অসংখ্য আলেম ও ইসলামপ্রিয় জনগণের রুহানী উস্তাদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। ২০১৫ সালে আমেরিকার বিখ্যাত “দ্যা রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার” প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের ৫০০ জন প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তির তিনি অন্যতম। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত ভদ্র, মার্জিত, পরিশীলিত, মৃদুভাষী এক অসাধারণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব। নরমদিল, অমায়িক ব্যবহার, ও স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী, সরল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এই মানুষটি কখনো কারো সাথে রূঢ় আচরণ করেছেন কিংবা কাউকে সামান্য কোনো কটুকথা বলে আঘাত দিয়েছেন এমন কোনো নজির নেই। সুদীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দেশবাসীর কল্যাণে নিবেদিত মাওলানা নিজামীর ব্যক্তিত্ব দেশবাসীর হৃদয়ে তাদের প্রিয় নেতা স্থান করে নিয়েছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাওলানা নিজামীর বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশের মর্যাদাকে বহির্বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করেছে। দুর্নীতিমুক্ত ও ইনাসফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের সংগ্রামে অগ্রসেনানী জনাব নিজামী।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে মোট দু’বার বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে তিনি বাংলাদেশের কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী হিসেবে সর্বমহলে নিজেকে একজন সৎ, দক্ষ ও অমায়িক নেতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর সাথে কাজ করা ব্যাক্তিরা তা একবাক্যে স্বীকার করেছেন। মেধা ও নৈতিকতা সমন্বয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবার জন্য ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সংগ্রাম করে আসা মজলুম জননেতা জনাব নিজামী। জেল-জুলুম, নির্যাতন আর রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে তিনি নিজেই এখন মজলুমের এক আবহ। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম, শিক্ষা আন্দোলন, ১/১১ বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র, কেয়ার-টেকার সরকার আন্দোলন ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তিনি আপোষহীন বীরপুরুষ। মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা সংগ্রামে জীবন বাজি রেখে সর্বদা সোচ্চার থেকেছেন তিনি। এদেশের মানুষের তাহজীব-তামুদ্দুন, ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সবার অধিকার রক্ষার আন্দোলনে তিনি আছেন প্রথম কাতারে। এ জন্য তাঁর জীবননাশের চেষ্টাও হয়েছিল অনেকবার। নাস্তিকতাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের রক্তচক্ষু মোকাবিলা করে আসা একজন সংগ্রামী প্রাণপুরুষ তিনি। নীতির প্রশ্নে সদা আপোষহীন এই মানুষটি কেবলমাত্র ইসলামী আন্দোলন করার আপরাধে ফাঁসির মুখোমুখি আজ দ-ায়মান। সরকার শুধুমাত্র আদর্শিক কারণেই ইসলামী আন্দোলনের এই জনপ্রিয় নেতাকে হত্যার পাঁয়তারা করছে।
ফ্রান্সিস বেকন বলেছে- “সত্য বলার স্বাধীনতা পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর ও মূল্যবান জিনিষ”। বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সে রোশানলে পড়ে তিনি আজ কারাগারের চার দেয়ালে বন্দী। তাঁর ক্ষুরধার লেখনি, সুনিপুণ বক্তব্য এদেশের তরুণ সমাজকে আলোড়িত করেছে দারুণভাবে। তাঁর ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা, নিষ্ঠা-আন্তরিকতা ও দেশ প্রেমের মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেছেন একটি সফল প্রতিচ্ছবি। মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সততা, দক্ষতা ও দেশ প্রেমের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা সত্যিই বিরল। যিনি বারবার বিশ্বের গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান পেয়েছেন নিজ গুণে। এই অহংকার বাংলাদেশের জনগণের।
জন্ম, শৈশব ও শিক্ষা
এই ক্ষণজন্মা, মহান ব্যক্তিত্বের জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মনমতপুর গ্রামে। তাঁর পিতা মরহুম লুৎফর রহমান খান একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও খোদাভীরু লোক ছিলেন। প্রখর মেধার অধিকারী জনাব নিজামীর নিজগ্রামের প্রাইমারি স্কুল দিয়ে লেখাপড়ার সূচনা হয়ে বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৫৯ সালে আলিম পরীক্ষায় ১ম বিভাগে সমগ্র বোর্ডে ষোলতম এবং ১৯৬৩ সালে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল পরীক্ষায় ফেকাহ শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন
ছাত্র জীবনে এই মেধাবী চৌকস সচেতন মানুষটি ছাত্র-সমাজের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও মাদরাসা ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দানের দাবির আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রথম কাতারে। জনাব নিজামী পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত শিক্ষা-আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৬৭-৬৮ সালে ‘শিক্ষা সমস্যা-শিক্ষা সংকট’ ও ‘শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন’ আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল সকলের নিকট প্রসংশনীয়।
গণআন্দোলনে ও কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন বাংলাদেশের প্রতিটি গণআন্দোলনে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২-৯০ সাল পর্যন্ত তদানীন্তন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে জনাব নিজামী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে তিনি জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে জাতীয় সংসদে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মূলা সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। এ আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীর বহু যৌথ বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে অনকগুলো বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জামায়াতের তৎকালীন সংসদীয় দলের নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। কথায় আছে, ‘আওয়ামী লীগের সাথে থাকলে সঙ্গি আর বিরুদ্ধে গেলেই হয়ে যায় জঙ্গি’।
জনাব নিজামীর নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিসমূহ আওয়ামী দু:শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। আওয়ামী লীগ কর্তৃক ইসলাম ও মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা ধ্বংস, পৌত্তলিকতার প্রচলন, মাদরাসা শিক্ষা বন্ধের চক্রান্ত, কুখ্যাত জননিরাপত্তা আইনের ছদ্মাবরণে বিরোধী দল দমন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও দেশের অখ-তা বিরোধী পার্বত্য কালোচুক্তি, টিপাইমুখবাঁধ, গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তির নামে প্রহসন, সর্বোপরি দেশ-জাতিকে ধ্বংসের বহুমুখী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে মাওলানা নিজামীর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন থেকে নিয়ে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী আসাদ নিহত হয়। আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও মাওলানা নিজামী আসাদের জানাযায় উপস্থিত হন এবং ইমামতি করেন। এ-থেকে বোঝা যায় রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে মাওলানা নিজামী ছাত্রনেতা হিসেবে সকলের নিকট সম্মানের পাত্র ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান
জনাব নিজামী ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে ঢাকা মহানগরীর আমীর, এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল, সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালের ১৯ নবেম্বর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমীর নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি এই মহান দায়িত্বে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
শিক্ষার ইসলামীকরণ ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন
দেশব্যাপী প্রচলিত শিক্ষ-ব্যাবস্থার সংস্কার, উন্নয়ন ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাওলানা নিজামী পালন করেন আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা। কওমী মাদরাসার স্বীকৃতি ও মান প্রদান এবং ফাজিল কামিলের মান প্রদানের ক্ষেত্রে চারদলীয় জোট সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাঁর রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ ভূূূমিকা।
সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে মাওলানা নিজামী
জনাব নিজামী শৈশবকাল থেকে কল্যাণমুখী সাহিত্য সাংস্কৃতিক ধারার সাথে যুক্ত। তিনি বিভিন্ন জাতীয় ও সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দান করে সুস্থ ধারার সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে অবদান রেখে আসছেন। তিনি নিজেও একজন বড় মাপের সাহিত্যিক। গদ্যশিল্পে তাঁর রয়েছে ব্যতিক্রমী পারঙ্গমতা।
লেখক ও চিন্তাবিদ মাওলানা নিজামী
জনাব নিজামী সংগঠনের দায়িত্ব পালন ও রাজনৈতিক ব্যস্ততা সত্ত্বেও ইসলামী সাহিত্য রচনা ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছেন। বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। তাঁর সৃজনশীল ও গবেষণাধর্মী এবং তথ্যসমৃদ্ধ লেখা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছাত্রজীবনেই তিনি একজন লেখক ও ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মৌলিক চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর লেখনিতে। এ পর্যন্ত তাঁর লেখা প্রায় অর্ধশত বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তাঁর বিভিন্ন ভাষণ-অভিভাষণেও রয়েছে চিন্তা ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাঁর লেখনির প্রভাব বিদ্যমান।
বিদেশে সফর
জনাব নিজামী ইসলামের দাওয়াতী মিশন নিয়ে গিয়েছেন পৃথিবীর প্রান্তে-প্রান্তে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইসলামী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে বিদেশ সফর করেন। এসব সফরে তিনি রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ইসলামী নেতৃবৃন্দের সাথে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। তিনি গ্রেট বৃটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, গ্রীস, জার্মানী, চীন, ইতালী, কানাডা, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, কুয়েত, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, জাপান, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্কসহ প্রায় অর্ধশত দেশ সফর করেন। এ পর্যন্ত প্রতিবারই সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে রয়েল গেস্টের মর্যাদা পান তিনি।
চারদলীয় ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতা
১৯৯৬ সালে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা আওয়ামী দু:শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ চারদলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা জনাব নিজামী। চারদলীয় ঐক্যজোট ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয় লাভ করে এবং সরকার গঠন করে। নানান চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করে চারদলীয় ঐক্য অটুট রাখা ও শক্তিশালী করার পেছনে মাওলানা নিজামীর অপরিসীম ধৈর্য্য ও ত্যাগ অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জামায়াতের দু-শীর্ষ নেতা মন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে কায়েম করেছেন সততা, ইনসাফ, সত্যবাদিতার উজ্জল উদাহরণ। আত্মত্যাগ, আন্তরিকতা, নিষ্ঠার মাধ্যমে দেশ প্রেমের স্বাক্ষর রেখেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে। জনগণের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছেন একটি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন। তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকা দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাই ষড়যন্ত্র আর কূটকৌশলের মধ্যদিয়ে চলতে থাকে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে হত্যা করার ঘৃণ্য চক্রান্ত।
সফল মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী
জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়ে চারদলীয় ঐক্যজোট সরকার গঠন করে। জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকরের কৃষিমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আওয়ামী দু:শাসনে দুর্নীতিগ্রস্ত এই মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশ ও জাতির সেবায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করেন। খাদ্যশস্য উৎপাদন, বিএডিসি’র বীজ উইং শক্তিশালীকরণ, কৃষিবিদ-কৃষিবিজ্ঞানীদের পদোন্নতি, মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক সফর এবং কৃষিখাতে একটি বিপ্লব, ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষের সূচনা, ব্লক সুপারভাইজারের পদবী পরিবর্তন, মাটির গুণগতমান পরীক্ষা, ভূট্টা ও পাটের চাষ বৃদ্ধি, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম সম্প্রসারণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পুণর্গঠন এবং এই মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক সফলতার ফলশ্রুতিতে ভেঙ্গেপড়া বিতর্কিত শিল্পখাতকে পুনরুজ্জীবিত ও গতিশীল করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতোই মাওলানা নিজামী দেশের কল্যাণে শিল্প মন্ত্রণালয়কে গতিশীল ও যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নতুন শিল্পনীতি, প্রণয়ন, এসএমই নীতি-কৌশল গ্রহণ, শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি শতকরা ১০.৪৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে, সুষ্ঠুভাবে সার সরবরাহ, দুটি নতুন সার কারখানা স্থাপন, বন্ধ শিল্প চালু, শিল্প নগরী স্থাপন, চিনিশিল্পে প্রায় ৭০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন, ১ লাখ ৩২ হাজার ৩শ ৭৫ জন লোকের কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পখাতে রফতানি আয় বৃদ্ধি, লবণ উৎপাদন: এ-যাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড,বিএসটিআই’র আধুনিকায়ন, ফোর্ট ফর্টিফিকেশন এ্যালায়েন্স গঠন, ন্যাশনাল এ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড গঠন,মেধা সম্পদের অধিকার সংরক্ষণ: গঠনমূলক এক মহৎ পদক্ষেপ,বিভিন্ন সংস্থার উৎপাদন: লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে। বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জনাব নিজামীর দায়িত্বশীল ভূমিকার কথা সর্বজনবিদিত। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমীর হিসেবে, বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে এবং চারদলীয় ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতা হিসেবে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে সরকারের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এজন্য তিনি এবং তাঁর দল আজ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
জাতীয় সংসদে নিজামী
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী দু- মেয়াদে বিপুল ভোটে পাবনা-১ [সাঁথিয়া-বেড়া] নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গড়ে তুলেন আধুনিক পাবনা। তাঁর প্রতি জনগণের সমর্থনই বলে দেয় তিনি কতটা জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তাই বিরোধীদের চক্ষুশুলের কারণ। জাতীয় সংসদে গঠনমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য তিনি বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বিভিন্ন ইস্যুতে জনাব নিজামীর যুক্তি ও তথ্যভিত্তিক বক্তব্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে তিনি একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে দেশবাসীর নিকট খ্যাতি লাভ করেন। তিনি হয়ে উঠেন অত্যান্ত জনপ্রিয়। তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক, তথ্য-যুক্তি ও সময়োপযোগী বক্তব্য পার্লামেন্টে সকলের সমর্থন লাভ করে। তিনি সংসদীয় দলনেতা ছাড়াও ৪টি পার্লামেন্টারি কমিটির সদস্য ছিলেন।
জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান
চারদলীয় ঐক্যজোট যখন দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সন্ত্রাস দমন সহ নানাবিধ ক্ষেত্রে একের পর এক সাফল্য অর্জন করে চলছিল, ঠিক তখন ইসলাম ও দেশ-বিরোধী শক্তির ক্রীড়নক গোষ্ঠী দেশব্যাপী বোমা হামলা চলায়। এ-হামলা ছিল ইসলামের বদনাম রটানো এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করতে। মাওলানা নিজামীর বলিষ্ট ভূমিকার কারণে বোমা হামলাকারী এ-সব ঘাতকদের মুখোশ জাতির সামনে খুলে যায়। চারদলীয় জোট সরকার অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদান করে।
বিশ্বরাজনীতিতে মাওলানা নিজামী
মাওলানা নিজামীর মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সংস্কারে রেখেছেন ঐতিহাসিক ভূমিকা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আর্ন্তজাতিক রাজনৈতিক ইস্যুতে মাওলানা নিজামীর ভূমিকা প্রসংশিত হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন সংকট সমাধানে ২০০২ সালের ২৭ মার্চ বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ডক্টর ইউসুফ আল কারযাভীর নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের দশজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা নিজামীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ২০০২ এর ১১ এপ্রিল মাওলানা নিজামী রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর সম্মেলনে যোগদান করেন এবং সৌদি গেজেট পত্রিকায় সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। এসময় মাওলানা নিজামীসহ মুসলিম বিশ্বের ৫২জন বিশিষ্টি চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবি আরব ও মুসলিম বিশ্বের জনগণের প্রতি ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আহবান জানান। ২০০৩ সালের ১৫-১৭ অক্টোবর চীনে অনুষ্ঠিত Sustained Elimination of Iodine Deficiency Disorder শীর্ষক সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জনাব নিজামী।
২০০৬ সালে তিনি ইংল্যান্ডের শীর্ষ বৈদেশিক ও কূটনৈতিক নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ ফোরাম চেথম হাউজের আমন্ত্রণে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামী রাজনৈতিক দলসমূহ : জামায়াতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে তিনি এ-সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য এ বৈঠকে বৃটেনের বিশিষ্ট নীতিনির্ধারক বুদ্ধিজীবি, কূটনৈতিকবৃন্দ, পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় তিনি উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। জনাব নিজামী প্রথম বাংলাদেশী নেতা, যিনি চেথম হাউজের আমন্ত্রণে সেখানে বক্তব্য রাখেন। জনাব নিজামীর অসাধারণ দেশপ্রেম, নীতিনিষ্ঠা ও কিংবদন্তিতুল্য সততা আজ গণমানুষের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
জুলুম-নির্যাতন ও কারাবরণ দেশ ও জাতি গঠনে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে চলতে থাকে নানা রকম ষড়যন্ত্র। এমনকি জীবনাশের চেষ্টাও হয়েছে অনেকবার। ২০১০ সালের ২৯ জুন কথিত ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়া সংক্রান্ত মামলায় জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার পথে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পর একের পর এক মিথ্যা ও সাজানো মামলায় দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। মাওলানা নিজামীকে এ পর্যন্ত অসংখ্য হয়রানীমূলক মামলায় জড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক মামলা, চারদলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ এই নেতাকে এসব ১১টি মামলায় ২৪ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের আদেশে ধানমন্ডির কথিত সেইফহোমে একদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়।
এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেছিলেন, শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামী করার অপরাধেই (!) তার বিরুদ্ধে এ সব সাজানো অভিযোগ আনা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তাদের অপরাধ, তারা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে।” ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয় চট্টগ্রামের আদালত। কাকে খুশি করতে এই রায় দিয়েছে সেটিই যেনএখন বড় এখপ্রশ্ন!
১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস ও সংঘাত-সংঘর্ষ বন্ধ করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক আমন্ত্রি বৈঠকে তাঁর উপরর্ পরিকল্পিতভাবে চালানো হয় নগ্নহামলা। এ-ঘটনায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
বিগত আওয়ামী দু:শাসনামলে আওয়ামী লীগের নির্দেশে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আওয়ামী-পুলিশ-বাহিনী সরাসরি তাঁর মত প্রাজ্ঞ ও প্রবীণ রাজনীতিবিদের উপর লাঠিচার্জ করার দু:সাহস প্রদর্শন করে। কিন্তু কোন হুমকি, আঘাত ও আক্রমণ কখনও তাঁকে বিচলিত করতে পারেনি। কারণ, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই যাঁর একমাত্র কাম্য; কোন বাধা, কোন ষড়যন্ত্রই তাঁর উদ্যমকে নস্যাৎ করতে পারে না। মাওলানা নিজামী আজ গনতন্ত্র, শান্তি ও ন্যায় বিচার এর মূল্যবোধ ভিত্তিক পরিচালিত ইসলামি রাজনৈতিক আদর্শে জড়িত হওয়ার কারনে শত্রুদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।
মাওলানা নিজামী তার উপর ন্যস্ত মন্ত্রিত্বের মেয়াদকাল শেষ করার পর সেনাবাহিনী সমর্থিত care taker সরকার, তার বিরুদ্ধে নানা ভাবে মামলা দেয়ার চেষ্টা করে। তারই ধারাবাহিকতাই তারা তাঁকে দু দু বার গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তৎকালীন সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি। কারণ দূর্ণীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া যাদের মিশন এবং ভিশন। যারা আল্লাহর নিকট প্রতিটি কর্মের জবাবদিহির চেতনা লালন করেন তারা কি দূণীতি করতে পারে? তারই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধের তথাকথিত অভিযোগে আজ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার গভীর চক্রান্ত করছে সরকার।
এজন্য বি. সি. ওায় বলেছে- ”ক্ষমতা সবচেয়ে বড় মদের নেশার মতো। যাকে একবার পেয়ে বসে তাকে জীবনে শেষ করে দেয়”। আওয়ামী লীগ আজ অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার নেশায় মত্ত হয়ে শহীদ মুজাহিদ,কামারুজ্জামান,আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার ওপর আল্লাহর গযব ও তাঁর লানত এবং আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।” (৪ : ৯৩)
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ট্রাইব্যুনালে যা বললেন-
আমি আদালতকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমার ভূমিকা রাজনীতির বাইরে অন্য কোন কিছুর সাথে জড়িত ছিল না। রাজনৈতিকভাবে আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেছি। জামায়াতে ইসলামীও সে দাবি করেছে ইসলামী ছাত্রসংঘও একই দাবি করেছে। আমি মনে করি যদি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জরুরী নিবাচনের ফলাফল অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করা হত তাহলে ইতিহাসের এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না। সেই নির্বাচনের ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে কে বাধা সৃষ্টি করেছিল? কারা বাধা সৃষ্টি করেছিল? জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে বাধা সৃষ্টি করার মত একটি কথা বলেছিল এমন কোন প্রমাণ কেউ দিতে পারে না। ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি হিসেবে ভুট্টো সাহেবের কথার প্রথম প্রতিবাদ আমি করেছিলাম। ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে বাধা সৃষ্টি করেছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো সাহেব। জেনোসাইডের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে কারণে তার সাথে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
মাননীয় আদালত, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর মন্ত্রী হবার কারণে আর একটু রাগ হয়েছিল, আমীরে জামায়াত নির্বাচিত হওয়ার পর আমি বেশি নজরে আসি, মন্ত্রী হওয়ার পর আর একটু বেশি নজরে আসি। কিন্তু আমি আপনার নিকট পরিষ্কার বলতে চাই মন্ত্রী হয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে বা স্বার্থের বিপক্ষে কোন কাজ করিনি। মাননীয় আদালত, কোন সরকারই শেষ সরকার নয় এবং দুনিয়ার কোন বিচারই শেষ বিচার নয়, এই বিচারের পরেও আর একটি বিচার হবে। আমাকে, আপনাকে, সকলকেই সেই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এই বিচারের জন্য কিভাবে সাক্ষী যোগাড় করা হয়েছে, কিভাবে বাদী বানানো হয়েছে, কিভাবে ইনভেস্টিগেশনের নামে একটি প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি চরিতার্থ করার জন্য হিংসাত্মক অভিযান চালানো হয়েছে।
একটি হাদীস হলো-একজন লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনল তাই বলে দিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এই কথার ভিত্তিতে শোনা কথা কোন মামলা-মোকদ্দমায়, কোন বিচারে প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হতে পারে না। দ্বিতীয় হাদীসটি হল বিচারকের দায়িত্ব কর্তব্য ও মর্যাদা সম্পর্কে, বিচারক তিন শ্রেণীর-প্রথম শ্রেণীর বিচারক, যারা হক উদঘাটন করে, উপলব্ধি করে হকের পক্ষে রায় দেয় তারা জান্নাতী, আর এক শ্রেণী হল যারা হক বুঝবে কিন্তু রায় দেবে বিপরীত, তারা জাহান্নামী, আরেকটা শ্রেণী যারা না বুঝে রায় দেবে তারাও জাহান্নামী। আমি প্রাণ খুলে দোয়া করি, আপনারা এই ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বে আছেন, রাসূল (সা.) এর ভাষায়, আল্লাহ আপনাদের প্রথম শ্রেণীর বিচারক হওয়ার তাওফীক দান করুন এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত হওয়া থেকে হেফাজত করুন।”
রাজনৈতিক কারণেই এই বিচার
সরকার যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের হাতিয়ার হিসেবেই গ্রহণ করেছে। এই বিচারের জন্য প্রণীত আইন ও বিধিমালা নিয়ে দেশে বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে। এর স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞগণ প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপ, এ্যামনেস্