পত্রিকায় দেখলাম, সরকার শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রীসংস্থার কাজ নিষিদ্ধ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে-“শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। কলেজ ও মাদরাসা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদ্দেশ্যে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, ইসলামী ছাত্রীসংস্থা নামে একটি সংগঠন কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী ও সরলমনা ধর্মভীরু মহিলাদের জিহাদে অংশগ্রহণসহ সংবিধানের বাইরে সমাজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে জিহাদি মনোভাবাপন্ন করে তোলার অপচেষ্টা করছে মর্মে জানা যায়। এসব কার্যক্রমের ফলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও শিক্ষাঙ্গনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়া সহ অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। অনতিবিলম্বে এই অপচেষ্টা বন্ধ করা প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুরূপ কর্মকান্ড যাতে না ঘটে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে”। (কালের কন্ঠ ২১-০৯-২০১৬)
খবরটি পড়ে ভাবলাম আওয়ামী সরকার এবারও প্রতিপক্ষকে আদর্শিক ভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে আইনের আশ্রয় নিলো কেন? এর কারণ আইনের মাধ্যমে বোকাকে ধোকা দেয়া সহজ। কিন্তু আইনের মাধ্যমে ন্যায়ের খোলসে সবচেয়ে অন্যায়টি কর্মটি সম্পন্ন করে শাসক গোষ্ঠী। আওয়ামীলীগ জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অপকর্ম করতে করতে এখন প্রান্তিক সীমায় পৌঁছে গেছে। ছাত্রীসংস্থার মতো আদর্শবান, অ-রাজনৈতিক, শান্তিপ্রিয়, সু-শৃঙ্খল ছাত্রী সংগঠনকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আবার প্রমাণ করলো। তারা বিরোধী মতকে সহ্য করতে পারেনা।
“সোলোন Solon খৃঃ পূঃ ৫৯৪) এবং ক্লিসথেনেস (Clisthenes খৃঃ পূঃ৫০৮) ছিলেন এথেনীয় রাজনীতির অন্যতম আইনবেত্তা। সোলোন বিশ্বাস করতেন যে, অভিজাত শ্রেণীর যশ, খ্যাতি, সম্মান ও প্রতিপত্তির উন্মক্ত প্রতিযোগিতাই জনজীবনের যত দুর্ভোগের কারণ।
হেরাক্লিটাস ও সোলোনের মধ্যে ঐকমত্যের সূত্রটি ছিল এই যে, আবহমান কাল ধরে বিশ্ব-প্রকৃতি একটি অমোঘ ঐশী বিধান তথা সুবিচার (Justice) অনুসরণ করে চলেছে। সুতরাং মানুষের সমাজেও সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য একটি সাধারণ আইনি বিধানমালা প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে। স্থিতির স্বার্থেই সুবিচার প্রতিষ্ঠিত রাখা প্রয়োজন। এ কারণেই হেরাক্লিটাস আইন (Law) এবং সুবিচার (Justice)-এর ধারণার মাঝে কোন পার্থক্য নির্ণয় করেননি; কারণ তার মতে আইন স্বতঃই সুবিচার। কিন্তু অচিরেই দেখা গেল যে সমাজে প্রচলিত সবগুলি আইন Positive law) সর্বক্ষেত্রে সুবিচার নিশ্চিত করতে পারছেনা বরং কোন কোন ক্ষেত্রে অবিচার (Injustice) কেই উৎসাহিত করছে। সুতরাং আইন (Law) এবং সুবিচার (Justice) স্বতঃই এক ও অভিন্ন হতে পারে না। একমাত্র ঐশী বিধানই সুবিচার নিশ্চিত করতে সক্ষম। সমাজে প্রচলিত (Positive) আইনগুলিকে ঐশী বিধান Divine law) সমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না করা গেলে সুবিচার নিশ্চিত হতে পারে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সুবিচার (Justice) হল মূল উদ্দেশ্য আর আইন (Law) হল উপায় মাত্র।” আওয়ামী লীগের সকল অপকর্মের বিচার পেতে আল্লাহর দরবারে আরো কিছুদিন হয়তো অপেক্ষা করতে হবে।
যাই হোক শিক্ষাঙ্গনে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার খবরটি পড়ে আমার মতো একজন দূর্বল পাঠকের মনে যে প্রশ্নগুলোর উদয় হয়েছে তা হলো-
(ক) ছাত্রীসংস্থার কাজ আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ছিল কবে? কারণ এর আগে বিভিন্ন সময় ছাত্রী সংস্থার অনেক মেয়েকে হল, মেস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর থেকে রেহাই পায়নি অন্তসত্ত্বা নারী, পরীক্ষার্থী, শিশু-কিশোরীও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী বাম শিক্ষকরা ইসলামপ্রিয় মেধাবী ছাত্রীদেরকে হয়রানি করে আসছে। তার কয়েকটি উদাহরণ-
গত ১৯ আগস্ট ২০১৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমানের উগ্র সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়েছেন বোরকা পরা এক ছাত্রী। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ও রাজনীতি বিভাগে হিজাব পরায় কয়েকজন ছাত্রীকে গালমন্দ করে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন অধ্যাপক খুরশিদা বেগম। নামাজ আর পর্দা করার অপরাধে ৮ ছাত্রীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বের করে দেয়া হয়। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের করা হয় নির্যাতন করে দেয়া হয় পুলিশে।
২ জুলাই ১২ চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের ছাত্রীদের হিজাব পরতে এবং নামাজ পড়তে বাধা এবং নামাজ ঘরে তালাবদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ সময় শিক্ষিকারা সেখানে রাখা বিভিন্ন ধর্মীয় বই, হিজাব পরা ও নামাজ পড়া নিয়ে কটূক্তি করেন। অঞ্জলী দেবী নামে এক শিক্ষিকা জুতা পরা অবস্থায় নামাজ ঘরে প্রবেশ করে তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘নামাজ ঘরে জুতা নিয়ে ঢুকেছি, কই আলাহ আমাকে কী করেছে?’ (আমার দেশ-০৩ ডিসেম্বর ১২)
২৩ জুলাই ২০১২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে তল্লাশি করে বিভিন্ন বিভাগের নয় জন মেধাবী ছাত্রীকে আটক করেছে ছাত্রলীগ ও প্রশাসন। এদের অপরাধ নামাজ ও কোরআন পড়া!
২০১০ সালের ৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. একেএম শফিউল ইসলাম তার ক্লাসে ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি বলেন, ক্লাসে ‘মধ্যযুগীয় পোশাক বোরকা’ পরা যাবে না। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের বোরকা ও হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়। মূলত এই সরকারেরর শাসনামলে নারী নির্যাতের কয়েকটি ঘটনা গোটা জাতির মাথাকে নিচু করে দিয়েছে।
মানব জাতির অর্ধেক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নারী। তাদেরকে অবহেলা ও উপেক্ষা করে মানব সভ্যতার উন্নতি ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। আজ আমরা যেন আবার প্রাগৈসলামীক যুগের দিকে ফিরে যাচ্ছি?
(খ) শিক্ষাঙ্গন ছাত্রীসংস্থার কাজ হঠাৎ নিষিদ্ধ হল কেন? ছাত্রী সংস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৭৮ সালে। তাহলে এতো পুরাতন একটি সংগঠন এখন হঠাৎ করে রাষ্ট্র বিরোধী হয়ে উঠল? ছাত্রী সংস্থা অবহেলিত, শিক্ষার আলো থেকে ঝড়ে পড়া ছাত্রীদেরকে আলোর পথ দেখায়। গবীর-অসহায়, মেধাবী ছাত্রীদেরকে বৃত্তি প্রদান,অর্থিক সহযোগীতা,ফি কোচিং,বিনামূল্যে বই বিতরণ কওে আসছে। এসব ছাত্রকল্যাণমুখী কাজের মাধ্যমে ছাত্রী সংস্থা মূলত এদেশের ছাত্র-শিক্ষকদেও নিকট জনপ্রিয়তা ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েয়ে। আমাদেও শিক্ষামন্ত্রী বলছেন-শিক্ষার আলো পৌঁছাতে তিনি সবার সহযোগীতা চান। আর যারা শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রীদের কল্যাণে ভূমিকা পালন করছেন তাদের তিনি নিষিদ্ধ করছেন? এটি শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের দ্বৈত আচরণ নয় কি?
(গ) শিক্ষামন্ত্রাণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- “ইসলামী ছাত্রী সংস্থা নামে একটি সংগঠন কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী ও সরলমনা ধর্মভীরু মহিলাদের জিহাদে অংশগ্রহণসহ সংবিধানের বাইরে সমাজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে জিহাদি মনোভাবাপন্ন করে তোলার অপচেষ্টা করছে মর্মে জানা যায়”। এ সম্পর্কে সংগঠনের সভানেত্রী ডা. শিরিন আক্তার এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা দেশের ছাত্রীসমাজের কাছে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক এবং নিয়মতান্ত্রিক বৈধ সংগঠন। ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু করে আজ অবধি এ সংগঠনটি ইসলামের আলোকে ছাত্রীসমাজের চরিত্র গঠন, দেশপ্রেম সৃষ্টি ও নাগরিক মূল্যবোধ তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সুদীর্ঘ এ ৩৮ বছরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা কোনো অন্যায়, অনৈতিক, আইন-শৃংখলা বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল না এবং এখনো নেই। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা কোনোভাবেই বৈধ ও যৌক্তিক হতে পারে না।
সভানেত্রী বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলাম প্রচারের কাজ, ইসলামী আদর্শ অনুসরণ করা কখনোই অবৈধ হতে পারে না। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি কোনোটাই এদেশের সংবিধান বা রাষ্ট্রীয় কোনো নীতির বিরোধী নয়। এ সংস্থার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য হলো- এ দেশের ছাত্রীসমাজকে আল্লাহর কোরআন ও রাসুলের সুন্নাহ অনুযায়ী গঠন করে তাদেরকে আদর্শ মুসলিম নারী হিসেবে গড়ে তোলা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যাতে দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি হাসিল করা যায়। বর্তমানে অপসংস্কৃতি ও অনৈতিকতার যে সয়লাবে ছাত্রীসমাজ ভেসে যাচ্ছে, তা থেকে এ দেশের ছাত্রীদের উদ্ধার করে সঠিক ইসলামী মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়াই এ সংগঠনের কর্মসূচি। সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি না থাকায় এ সংস্থার কাজ নিষিদ্ধ করা সম্পূর্ণ বেআইনী ও অসংবিধানিক একটি সিদ্ধান্ত। বিজ্ঞপ্তি।
এখানে মন্ত্রণালয় মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। আসলে ছাত্রীসংস্থার কর্মসূচী হচ্ছে শুধুমাত্র আদর্শ নারী গঠন। রাষ্ট ব্যবস্থা কায়েমের কোন কর্মসূচি তাদের নেই।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রীসংস্থা। আসলে জামায়াতের সাংবিধানিক কোন অঙ্গ সংগঠন নেই। আর যদি ধরেও নেই ছাত্রীসংস্থা জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন তাহলে জামায়াত যে রাষ্ট্র কায়েম করতে চায় তাতে অঙ্গসংগঠন ছাত্রী সংস্থা অন্য কোন রাষ্ট্র কায়েম করতে চায় এ কথা কতটুকু সত্য? জামায়াত ইতিপূর্বে এই প্রচলিত রাষ্ট্র পরিচালনার অংশগ্রহন, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছে। প্রতিটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাহলে (জামায়াত) কর্মকান্ড হঠাৎ করে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক? আসলে আওয়ামী লীগের মতের সাথে বিরোধ হলেই সে জঙ্গি, স্বাধীনতা বিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী আরো কত কি!!
(ঘ) ৩৮ বছরের পথ চলায় তারা কোন জঙ্গি তৎপরতা, গোপন কর্মকান্ড কোন কিছুর সাথে তো সম্পৃক্ত নয়ই বরং ইতিপূর্বে প্রশাসনের অনুমোদন ও সহযোগিতায় তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। তাহলে কেন অসৎ উদ্দেশ্যে এমন অন্যায়-অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন?
৯০ ভাগ মুসলমানের দেশেও আজ নামাজ পড়া, ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা আর বোরকা পরা-ই কি একমাত্র অপরাধ? তবে সরকার ও তাদের মদদপুষ্ট মানবাধিকার এবং নারী সংগঠনগুলো একেবারে নির্বিকার।
অথচ পয়লা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হয় অর্ধশতাধিক ছাত্রী। ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে ছাত্রীদের দিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার খবরে সর্বমহলে ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানেও তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয় বেশ কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবক। এছাড়া অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা।
আওয়ামীলীগ ইসলামী ছাত্রীসংস্থার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে যতই নিষেধাজ্ঞা জারি করুক না কেন এই সমাজের মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং ইসলামী ছাত্রীসংস্থার তৈরি করা মেয়েরা তাদের চরিত্র, নৈতিকতা, যোগ্যতা-দক্ষতা ও উন্নত আচরণের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করছে।
এবার দুটি কেস স্টাডি দিয়ে লেখার ইতি টানছি-
প্রথমঃ আমরা ১০ ভাই-বোনের মধ্যে ছোট ভাইটি কেবল অবিবাহিত। আব্বার অনুপস্থিতিতে আমার বৃদ্ধ মায়ের একমাত্র সন্তানের বিবাহ আয়োজন কে তিনি খুব দায়িত্বের সাথে আঞ্জাম দিতে চান। বিভিন্ন সময়ে মায়ের আলাপ থেকে তা আমি উপলব্ধি করেছি।।
বিভিন্ন সময়ে মায়ের সাথে যখন সাক্ষাতে বা ফোনে কথা বলি, প্রায় আমার ছোট ভাইয়ের বউ নিয়ে তিনি তার মনের ভাব প্রকাশ করেন। তার মনের একমাত্র আকুতি ইসলামী ছাত্রীসংস্থার একটি মেয়েকে তিনি বৃদ্ধ বয়সে বউ হিসেবে কাছে পেতে চান। কোন ধন-সম্পদ কিছুই তিনি চান না! শুধুমাত্র দ্বীনদ্বার, ঈমানদার ভালো চরিত্রবান একটি মেয়েকে তিনি ছোট ছেলের বউ হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশী।
কারণ- ইতিমধ্যে তিনি ছাত্রীসংস্থার তৈরি করা একজন তাঁর ছেলের বউ হিসেবে পেয়ে খুবই সন্তোষ্ট। এটি বিভিন্ন সময় তিনি বলে থাকেন। মা যখন তার এই বউয়ের জন্য চোখের পানি ছেড়ে দোয়া করতে দেখি তখন সত্যিই ছাত্রীসংস্থার মতো এমন একটি আদর্শবান সংগঠনের জন্য শুধু আল্লাহর দরবারে দোয়াই করতে ইচ্ছে করে। আজ এ সংগঠনের তৈরী করা মেয়েরা অনেক পরিবারে আশার আলো জ্বালিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
এজন্য নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন, “আমাকে একজন আদর্শ মা দাও, আমি একটা আদর্শ জাতি দেবো”। একটি উন্নত জাতি ও নৈতিক চরিত্র নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলতে ছাত্রীসংস্থা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছে। জাতির এই গর্বিত সন্তানদের অভিনন্দন ও মোবারকবাদ।
দ্বিতীয়ঃ মরহুম এ্যাডভোকেট সানজিদা তাহসিনা ক্ষণজন্মা এক দা’য়ী ইলাল্লার নাম। ছাত্রী অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সাথে সক্রিয় ছিলেন এবং ছাত্রীদের মাঝে ভালো পড়ালেখার পাশাপাশি পরিপূর্ণ ইসলাম পালনের জন্য তিনি কাজ করতেন।
পৃথিবীতে এসেছিলেন ১৯৯১ সালের ২৩ আগস্ট। মাত্র ২৫ বছরের কর্মময় জীবন এর ইতি টেনে ২০১৬ সালের ২৫ মে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল থেকে এসএসসি তে এ প্লাস অর্জন করেন। “এ” লেভেল কমপ্লিট করে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে এলএলবি ডিগ্রী এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রিমিনোলজিতে (অপরাধ বিদ্যা) মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ইন্তিকাল করার দুই সপ্তাহ আগে তিনি ঢাকা বার এসোসিয়েশন থেকে এডভোকেটশিপ অর্জন করেন। ইসালামী জীবন যাপনে তিনি খুবই সচেষ্ট ছিলেন। পর্দার ব্যাপারে তিনি ছিলেন আপোষহীন। ছোট বেলা থেকেই নিকাবসহ হিজাব পরতেন। পর্দার মাঝে থেকেই সফলতার সাথে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
ইন্তিকাল করার মাত্র দুই মাস আগে একটি দ্বীনদার পরিবারের এক ব্যারিস্টার ছেলের সাথে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়। শ্বশুরবাড়ির ভাষ্যমতে, এই দুই মাসের মধ্যে তিনি পরিবারের সবাইকে খুবই আপন করে নেন। বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সম্মানিত শাশুড়ির সানজিদা তাহসিনাকে Bird of Paradise (জান্নাতের পাখি ) বলে অভিহিত করেন।
হাইকোর্টের আইনজীবী শ্রদ্ধেয় শ্বশুরের মতে, “বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারে যদি সানজিদা তাহসিনার মতো মেয়ে গড়ে উঠতে পারে তাহলে এই বিশৃঙ্খল সমাজ থেকে বের হয়ে আমরা এক সুশৃঙ্খল ইসলামী সমাজ তৈরি করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।” মহান আল্লাহ তায়ালা সানজিদা তাহসিনার সকল নেক আমল কবুল করুন। আমিন।
ইসলামী ছাত্রীসংস্থা এ নারী জাতির জন্য আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত। আদর্শ নারী গঠনের তাদের এই ঐতিহাসিক উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে গোটা জাতি। তাই দলমত নির্বিশেষে সকলেই তাদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
সুতরাং সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীসংস্থার কর্মকান্ডে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।