বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের সিপাহসালার, দা’য়ী ইলাল্লাহ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মরহুম মকবুল আহমাদ গত ১৩ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার দুপুর ১.০০ টার দিকে ইন্তিকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন…। ইসলামী আন্দোলনের এক কঠিন সময়ে তিনি কান্ডারীর দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী নিবেদিত প্রাণ এই দ্বীনের দা’য়ী শিক্ষকতার মাধ্যমে জীবন শুরু করেন। যোগ দেন সাংবাদিকতায়। তাঁর জীবন ছিল নিষ্কলুষ এবং পরিচ্ছন্ন। তাঁর গায়ে সাদা পাঞ্জাবির মতই ছিলো চারিত্রিক ভূষণ।
মরহুম মকবুল আহমাদ সাহেব একজন বর্ণাঢ্য কিংবদন্তী রাজনীতিবিদ। তার থেকে বড় পরিচয় একজন স্বজ্জন, পরোপকারী, বিনয়ী, সদালাপী, নিরঅহংকারী, সবরকারী, আত্নপ্রত্যয়ী, পরম আল্লাহ নির্ভরশীল মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন, সত্যের পথে অটল-অবিচল। কুরআনের ভাষায় “আশিদ্দায়ু আলাল কুফ্ফার রুহামাউ বাইনাহুম” এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি ছিলেন অসম্ভব সাহসী দূর্জয়ী। বৃদ্ধ বয়সে এই ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী জালিম সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে মিথ্যা সাজানো নাশকতার মামলায়। তিনি দীর্ঘদিন কারাবরণ করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন কিন্তু দ্বীনের এই রাহবার ছিলেন অটল ও মজবুত।
এই নিবেদিত প্রাণ দা’য়ীর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো তিনি সবার মাঝে দাওয়াতী বই বিতরণ করতেন। রিমান্ড শেষে উনাকে যখন আদালতে আনা হলো, জানতে চাওয়া হলো স্যার আপনাকে রিমান্ডে কি জিজ্ঞাবাদ করেছে? তিনি হেসে বললেন তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আমিও তাদের জিজ্ঞাসা করেছি। আমি পুলিশ অফিসারদের বলেছি আপনারাতো মুসলমান। আপনারা নামাজ পড়েন? কুরআন শরীফ পড়তে জানেন? আপনার বিবি পর্দা করেন? সন্তানেরা কুরআন পড়তে জানে? তারা অবাক হয়ে বলেছে, স্যার আমাদের আর কেউ এভাবে কোনদিন কেউ বলেনি স্যার! আমি বলেছি আপনারা কুরআন-হাদিস পড়ার চেষ্টা করবেন। আবাক করার বিষয় এ কঠিন সময়েও তিনি দাওয়াত দিতে ভুলে যাননি।
মরহুম মকবুল আহমাদ ছিলেন সকলের কাছে একজন অবিভাবক। তিনি সবার খবর রাখতেন। আমার মেয়ে মারিয়ামের অসুস্থতার খবরে তিনি অনেক বেশী দো’য়া করতেন। সাক্ষাতে অথবা ফোনে কথা হলে তিনি তার নাম ধরে বলতেন। আমাদের উপদেশ দিয়ে বলতেন মারিয়াম নাম কুরআনে বর্ণিত নাম, সবর করো। তিনি নতুন পরিচয় হওয়া ব্যাক্তিদের ফোন নাম্বার তিনি কলেকশন করে ডায়েরীতে লিখে রাখতেন এবং বিভিন্ন সময় তাদের খোঁজ-খবর নিতেন।
আলহামদুলিল্লাহ,পরিবারকে তিনি ইসলামী আন্দোলনের পথে গড়ে তুলেছেন। সন্তানদের আন্দোলনে অগ্রসর করানোর ব্যাপারে পেরেশান ছিলেন। আমাদের সাথে সাক্ষাত হলেই উনার ছেলেদের এগিয়ে নিতে আমাদের বলতেন। তিনি ছিলেন অসম্ভব জ্ঞানপিপাসু। কোন নতুন বই প্রকাশ হলেই তিনি তা সংগ্রহ করতেন। উনার লেখা প্রকাশতি একটি বইতে সামান্য কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এখনো একটি পান্ডুলিপি আছে। ইনশাআল্লাহ তাও সময়মত প্রকাশিত হবে।
২০১০ সালের জুনে জামায়াতের তৎকালীন আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় আমীর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন শুরু করার ক্ষেত্রে যে কয়জন তাদের মেধা ও শ্রম সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছেন মকবুল আহমাদ তাদের অন্যতম। জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে মকবুল আহমাদের ভূমিকা উল্লেখ করার মত। সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছানো ও সুস্থ সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অবিশ্রান্তভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
জন্ম: অত্যন্ত সহজ সরল ব্যক্তিত্ব মকবুল আহমাদ ১৯৩৯ সালের ৮ই আগস্ট ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার ওমরাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম নাদেরুজ্জামান। তাঁরা ৫ ভাই ও ৩ বোন। তাঁর পরিবারের সকল সদস্যই ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত।
শিক্ষা ও ক্যারিয়ার: মকবুল আহমাদের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় পূর্বচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি স্থানীয় দাগনভূঞা কামাল আতাতুর্ক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নবম শ্রেণীতে তিনি জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের পরে তিনি ফেনী কলেজে ভর্তি হন। তিনি এ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং ১৯৬২ সালে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
কর্মজীবন:- এক বছর সরকারী চাকুরী করার পরে চাকুরী ছেড়ে দেন এবং শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। তিনি নিজ এলাকার শরিষাদী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ বছর এবং ফেনী সেন্ট্রাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। ১৯৭০ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন ফেনী মহকুমার দৈনিক সংগ্রামের প্রথম নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের চিংড়ি মৎস উৎপাদনের উপরে তার বিশেষ প্রবন্ধ (বাংলাদেশের “কালো সোনা” সৌদী আরবের “তরল সোনা”-কে ছাড়িয়ে যাবে) ৭০ দশকে দৈনিক সংগ্রামে ছাপার পর ব্যবসায়ী মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
ইসলামী আন্দোলন: ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত রয়েছেন। ১৯৬২ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান এবং ১৯৬৬ সালে রুকন (সদস্য) হন। ১৯৬৭ সাল থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত ফেনী শহর এবং ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তৎকালীন ফেনী মহকুমার,১৯৭০ -১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত তিনি নোয়াখালী জেলা জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য পদে ফেনী-সোনাগাজী নির্বাচনী এলাকা থেকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কাজ পুনরায় শুরু হলে তিনি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইসলামী আন্দোলনের পতাকাবাহী জাতীয় পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত।
২০০৪ সাল থেকে তিনি কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। একইসাথে ২০০৪ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশে ইসলামিক ইনস্টিটিউটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী সাহিত্য প্রকাশের প্রতিষ্ঠান আধুনিক প্রকাশনী বি.আই. ট্রাস্টের একটি প্রতিষ্ঠান।২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৃতীয় আমীর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পারিবারিক জীবন: ১৯৬৬ সালে লক্ষীপুর নিবাসী প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ঢাকা আরমানিটোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের হেড মাওলানা মরহুম ওহিদুল হকের কনিষ্ঠা কন্যা জনাবা সুরাইয়া বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাদের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। তারা সকলেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ড ঃ ছাত্র জীবন থেকেই তিনি সমাজ সেবামূলক কাজের সাথেও জড়িত রয়েছেন। নিজ গ্রামের যুবকদের নিয়ে ১৯৬২ সালে “ওমরাবাদ পল্লী মঙ্গল সমিতি” প্রতিষ্ঠা করেন এবং দীর্ঘ দশ বছর পর্যন্ত এ সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এলাকার রাস্তাঘাট, পুল ও সাঁকো সংস্কার নির্মাণে এবং দরিদ্র লোকদের সাহায্য-সহযোগিতাকল্পে এ সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন।
তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত “গজারিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার” ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ ও ৭৯ সালে তিনি “রাবেতা আলম আল ইসলামীর” মেহমান হিসাবে দু’বার পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করেন এবং জাপান ইসলামী সেন্টারের দাওয়াতে জাপান সফর করেন।
১৯৮৪ সালে তিনি ঢাকায় অবস্থিত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান “ফালাহ-ই-আম ট্রাস্টের” চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অদ্যবধি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে স্থানীয় “সিলোনিয়া আঞ্জুমানে ফালাহিল মুসলিমীন ট্রাস্ট” ও “ফেনী ইসলামি সোসাইটির” সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সিলোনিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগেই সিলোনিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদ ও “উম্মুল মোমেনীন মহিলা মাদ্রাসা” প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফেনী ইসলামিক সোসাইটির উদ্যোগে বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেনী শাহীন একাডেমী (কেজি ও হাই স্কুল) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ফেনী আল জামেয়াতুল ফালাহহিয়া ট্রাস্টের সদস্য এবং দাগনভূঞা সিরাজুম মুনিরা ট্রাস্টেরও সভাপতি। এর উদ্যোগে একটি এতিমখানা ও হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফালাহিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগেই ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফেনী জিলার মধ্যে প্রথম মানের মাদরাসা হিসাবে এ মাদরাসা বেশ সুনাম অর্জন করেছে।
সাহিত্যকর্ম ও দেশভ্রমণ: রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর মেহমান হিসাবে তিনি ২ বার হজ্জ পালন করেন। তিনি জাপান ও কুয়েত (সাংগঠনিক প্রয়োজনে) সফর করেন। সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় “জাপান সফর- দেখার অনেক, শিখার অনেক” এ বিষয় তার সফর অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি এবং আল্লাহর সাহায্যেও উপযুক্ততা অর্জন, মোট ২টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
এই প্রিয় নেতার ইন্তিকালে আমাদের রাজনৈতিক সহযোদ্ধারাও বিবৃতি দেয়ার সাহসটুকু দেখাতে পারেনি। যেমনি পারেনি সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম (রহ:) শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (রাহ:) ক্ষেত্রেও। আমাদের রাজনৈতিক অসৌজন্যতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে তা সহজে অনুমেয়।
অথচ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী গত ১৫ এপ্রিল তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে বলেন- “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মরহুম মকবুল আহমাদ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোনো ক্ষতিকর ভূমিকায় ছিলেন না। তিনি মকবুল আহমাদের প্রশংসা ও তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। যা পরে হাজারিকা প্রতিদিন নিউজ বুলেটিন-ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়।
জয়নাল হাজারী বলেন, ‘মকবুল আহমাদ আমাদের ফেনী অঞ্চলের ভদ্রলোক, ফেনীর কৃতি সন্তান ছিলেন। তিনি এক সময় জামায়াতে ইসলামীর প্রধান (আমীর) ছিলেন। মকবুল সাহেব ইন্তিকাল করেছেন। তার জানাজায়ও তার জনপ্রিয়তা প্রমাণ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তিনি ভদ্রলোক ছিলেন। মনে হয় জীবনে কারো সাথে কোনো দুর্ব্যবহার করেননি। পরহেজগার মানুষ ছিলেন। সৎ মানুষ ছিলেন। তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা যেভাবেই নেন না কেন, আমি এই মানুষটাকে সৎ হিসেবেই বিবেচনা করি। এমনকি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও তিনি কোনো ক্ষতিকর ভূমিকায় ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও ছিল না।’ ‘তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও কোনো মুক্তিযোদ্ধার বিরোধিতা করেননি। রাজাকারদের নেতৃত্ব দেননি। এরকমটাই শোনা গেছে, ‘যোগ করেন জয়নাল হাজারী। এ সময় তিনি মকবুল আহমাদের সাথে ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের কিছু স্মৃতি স্মরণ করেন। ওই নির্বাচনে মকবুল আহমাদও জয়নাল হাজারীর প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন। জয়নাল হাজারী বলেন, ‘যাই হোক। এ লোকটা (মকবুল আহমাদ) ভালো ছিলেন। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন। তাকে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।’ (নয়া দিগন্ত)
জনাব মকবুল আহমদ এমপি, মন্ত্রী ছিলেন না, কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করছেনে তার থেকে অনকে বেশি। আল্লাহর দ্বীনের এই মর্দে মুজাহিদ ইন্তিকালের কিছু সময় আগেও মানবতার কল্যাণে কত পেরেশান ছিলেন! কর্তব্যরত চিকিৎসক লিখেছেন-“তিনি এখানে জীবন-মৃত্যুর মাঝে বসেও অন্যদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কিভাবে তার পরিচিত কিছু লোকের আয়ের ব্যবস্থা করে তাদের পরিবারের দূর্দশা দূর করা যায় সেই আকাঙ্খা। নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য কোন আক্ষেপ! নেই।
দিনে বেশ কয়েকবার তাকে ডাক্তার হিসেবে খুব কাছে থেকে দেখেছি প্রতিবারই মাথা নাড়িয়ে বলছেন, কোনো কষ্ট নাই। যেন প্রিয় রবের সাক্ষাতের ঘ্রাণ তার সব কষ্ট দূর করে দিয়েছে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সেই আজীবনের কাক্সিক্ষত মূহুর্তের জন্য।
দুপুর ১২ টায় দেখেছি তখন তার জাগতিক অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। সবাই বুঝতে পারছিলাম, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, বাকিটা মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতের অপেক্ষা। তখনও তিনি মাথা নাড়িয়ে বলছিলেন,আর কোনো কষ্ট নাই। এর কিছুক্ষণ পরই আল্লাহ তাকে কবুল করলেন।
আল্লাহ তাআলা তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। তিনি অনাগত ভবিষ্যতের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। দেশের জনগণ তাকে আজীবন স্মরণ রাখবে। ইসলামী আন্দোলনের জন্য তিনি যে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন তার জন্য শতাব্দী থেকে শতাব্দী তার জন্য দোয়া করতে থাকবে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
সারাজীবন ইসলামী আন্দোলনের জন্য জীবন উৎসর্গ করার শপথ করেছেন, সবসময় শহীদি মৃত্যু কামনা করেছেন, সেই মৃত্যু আল্লাহ তা’য়ালা কবুল করেছেন হাসপাতালের বিছানায়, মহামারী আক্রান্ত হয়ে।মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান দুপুরে দেয়া তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘চলে গেলেন ইসলামী আন্দোলনের এক বর্ণালী মুজাহিদ সাবেক আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদ। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন…।
আজীবনের এই দা’য়ী ইলাল্লাহ জামায়াতে ইসলামীর কঠিনতম সময়ের কাণ্ডারী আমাদের জন্য রেখে গেলেন অনেক শিক্ষা এবং উদাহরণ। রাব্বুল আলামীন তার এই গোলামের তামাম জিন্দেগীর সমস্ত ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে নেকিতে পরিণত করে দিন।তার নেক আমলগুলো কবুল করুন, শহীদ হিসেবে কবুল করে তাকে সম্মানিত করুন। মহান রবের কাছে আবেগ ও বুকভরা এ আকুতি”।’
মহান মা’বুদের দরবারে কায়মনোবাক্যে ফরিয়াদ জানাই আমরা যতটুকু আমাদের এই মুরুব্বীর কাছাকাছি ছিলাম সাহচর্য পেয়েছিলাম তার অসমাপ্ত কাজ আমরা এগিয়ে নিতে পারি। হে আরশের মালিক তোমার এই মোখলেস বান্দাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমাদের জান্নাতে একত্রিত হওয়ার তাওফিক দিন। আমীন॥
লেখক: সহকারী সম্পাদক, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা।