মানুষ যখন ক্ষমতার জন্যে আকুল আকাঙ্খাী হয়, তখন তার আচরণে পচন ধরে।’ কথাটি বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও সংবিধান প্রণেতা থমাস জেফারসন। চার্লস মঁতেস্কু বলেছেন-”তার চেয়ে বড় স্বৈরাচার আর নেই, যা আইনের ঢালের আড়ালে এবং ন্যায়বিচারের নামে চালানো হয়ে থাকে। অথচ’মানুষের জন্মগত অধিকারের গ্যারান্টি (Birth Rights of Man) দেশের সর্বোচ্চ আইন ‘সংবিধানে’ খচিত। যা বর্ণ, গোত্র, এলাকা, ভাষা সব কিছুর ঊর্ধ্বে। মানুষ কেবল মানুষ হওয়ার কারণে এ মর্যাদা। মৌলিক অধিকারের ধরন ও বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্ট করতে গিয়ে বিচারপতি জ্যাকশন বলেন, “কোন ব্যক্তির জীবন, মালিকানার স্বাধীনতা, বক্তৃতা-বিবৃতি ও লেখনির স্বাধীনতা, ইবাদত-বন্দেগী ও সমাবেশের স্বাধীনতা সংরক্ষিত। কিন্তু ক্ষমতার লোভেই শাসক গোষ্ঠী মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে বিভিন্ন সময়ে।
আমাদের প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশ এক কঠিন সংকটের মুখে নিমজ্জিত। দেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না থাকায় গণতন্ত্র অবরুদ্ধ ও মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত। জনগণের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে ইসলামী দল সহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে নগ্নভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে কার্যত একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও চরমপন্থা দমনে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় জনগনের মধ্যে হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে।
গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ, অপসংস্কৃতির সয়লাব ও নৈতিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। গুম, খুন, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক ও চোরাচালান ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, লুটপাট, দলীয়করণ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, অনৈক্য, মিথ্যাচার ও দমন পীড়ন ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও আজ সরকারী দলের দুর্বৃত্তদের লুটপাট, দখলদারিত্ব ও নির্যাতনের কারণে অনিরাপদ এবং অতিষ্ট।
দারিদ্র, বেকারত্ব, মেধার অবমূল্যায়ন, বৈষম্য, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা জনজীবনকে নাবিশ্বাস করে তুলেছে। দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে পড়েছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা -বাণিজ্যের অঙ্গনগুলো সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এদেশ এখন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর পরিবতে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। ভ্যান্স প্যাকার্ড এর মতে ”পুলিশী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হলো নিরাপত্তা তদারকির ভীতি তৈরী করা। নাগরিকগণের ধারণা জন্মে যে তাঁদেরকে সব সময় নজরে রাখা হচ্ছে এবং তাদের কথাবার্তায় আড়িপাতা হচ্ছে। তাদের চিঠিপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের বাড়িতেও যেকোনো সময়ে আগ্রাসন হতে পারে”।
যুগের অধিক চলা এই দু:শাসনে দেশের ১৮ কোটি মানুষ এখন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় অতিবাহিত করছে। বিরোধীদল গুলো এখন সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে। এই মুহূর্তে জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে আপসহীন সংগ্রামে রত। কিন্তু আন্দোলন দমনের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বুটের তলায় পিষ্ট হচেছ মানবাধিকার। বিরোধী মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে এখানে হামলা-মামলা আর বন্দুকের গুলির জোরে স্তব্ধ করে দিতে চায় আওয়ামী লীগ। স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ ও জনগণকে শাসন করার চেষ্টা চলছে এখানে। খুন-গুম, জীবনের নিরাপত্তাহীনতার আজানা আতঙ্ক তাড়া করছে প্রতিটি নাগরিককে।
রাজনীতিবিদ, সুশীলসমাজ, সাংবাদিক, ছাত্র-শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই জালিম সরকারের জুলুম-নির্যাতন, বঞ্চনা, অপমান আর লাঞ্ছনার শিকার। মানুষের ভোটাধিকার ছিনতাই, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, লুটপাটের ঘটনা বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে প্রতিটি নাগরিককে। জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার এখন জনগণকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। জেফারসনের ভাষায়‘যখন সরকার জনগণকে ভয় পায়, তখন এটা স্বাধীনতা’ আর ‘জনগণ যখন সরকারকে ভয় পায়, এটা নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়ন’ এবং জনগণের স্বাধীনতা, অধিকার ও জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন;
দেশী-বিদেশী প্রভাবশালী মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থাগুলো বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরছে প্রতিনিয়ত । রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দিয়ে সরকার বিভিন্ন অপকর্ম করতে বাধ্য করছে, ফলে নিষেধাজ্ঞার শিকার হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের বাহিনী, মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে বহিঃবিশ্বে ; কিন্তু সরকার সেদিকে কোনো কর্ণপাত করছে না। স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার, ধর্মের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক কর্মকান্ডের স্বাধীনতা, পারিবারিক জীবনের অধিকার, ফৌজদারি মামলায় সুবিচার পাওয়ার অধিকার, অমানবিক শাস্তি থেকে নিষ্কৃতির নিশ্চয়তা, ইত্যাদিই মানবাধিকারের পর্যায়ভুক্ত। সারা বিশ্বে এখন বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে। যা দেশের জন্যে মর্যাদা হানিকর।
আসলে যেখানে আইনের শাসন নেই বললেই চলে, জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ সেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার বলতে কিছুই থাকেনা। দুর্নীতি জীবনের অনুষদে পরিণত হয়। আমরা এখন এমন দেশেরই নাগরিক। জাতিসংঘের মানবাধিকার-সম্পর্কিত ঘোষণা (United Nations Declaration of Human Rights) এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার্থে ইউরোপীয় কনভেশন (European Convention for the Protection of Human Rights and Fundamental Freedoms) ইত্যাদি। মানবাধিকার রক্ষার জন্যে এ সম্পর্কিত ইউরোপীয় আদালত (European Court of Human Rights)-ও গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ এই সমস্ত সংস্থার সাক্ষরকারী রাষ্ট্র হলেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এখন শূন্যের কোঠায়। শাসকগোষ্ঠী যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আর সামাল দিতে পারে না, তখনই এই পথের আশ্রয় নেয়।
ফ্যাসিবাদের দুই প্রধান মহানায়ক ছিলেন ইতালির বেনিতো মুসোলিনি এবং জার্মানির এডলফ্ হিটলার। তারাও আন্দোলন দমনে ক্ষেত্রবিশেষে ফ্যাসিবাদের আশ্রয় নেয়। এ কাজে তারা প্রধান হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে, বিশেষত রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে। পৃথিবীতে একনায়কত্বের (Dictatorship) শাসন সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। কারণ শাসক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষ যখন শাসিতের মতামতের ধার না ধেরে একছত্রভাবে শাসনকাজ চালিয়ে যায় তখন অনায়াসে জন্ম হয় একনায়কত্বের।
বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলো দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোকে বরাবরই বলে আসছে, এখানে এখন গণতন্ত্রের লেবাসে এক ব্যক্তির (শেখ হাসিনার) শাসনই বিদ্যমান। একনায়কত্ব সর্বদাই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের একছত্র স্বার্থে প্রতিপক্ষের ওপর সার্বিক নিষ্পেষণ চালিয়ে দেয়। আর এর মধ্য দিয়ে যা গড়ে উঠে Authoritarianism বা Autocracy বা Despotism ই হলো স্বৈরতন্ত্র, স্বৈরশাসনবাদ বা স্বেচ্ছাচারবাদ। স্বৈরতন্ত্র গণতন্ত্রের বিপরীত এবং প্রায়ই গণস্বার্থবিরোধী।
অ্যাডলফ হিটলার তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে কাল্পনিক শত্রুর সৃষ্টি করতে হবে। তা করে দেখাতে হবে যে, দেশ বিপদাপন্ন। এতে জনসাধারণ ভীত হয়ে পড়বে। জনগণ ভীত হলেই তাদের দাসত্বে পরিণত করা সহজ।” স্যার অর্নেস্ট বেন তাই বলেছেন, “বিপদ অন্বেষণ করার কৌশলই হচ্ছে রাজনীতি। বিপদ থাকুক আর নাই থাকুক।
বর্তমানে অসুস্থ রাজনীতি গোটা জাতির জন্যে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নোংরা রাজনীতির সর্বশেষ শিকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংগ্রামী আমীর ডা.শফিকুর রহমান। যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফার কমসূচি ঘোষনার কয়েক ঘন্টার মধ্যে সরকার জনগনের ফেরিওয়ালা হিসেবে খ্যাত, মানবিক সমাজ বিনিমানের অন্যতম কারিগর,বিশ্ব ইসলামী আন্দোলন অন্যতম নেতা ডা.শফিকুর রহমানকে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেছে। এই জাতীয় শীর্ষ নেতাকে ২ দফায় ৮ দিনের রিমান্ড আওয়াী লীগের রাজনৈতিক ঘৃন্য চরিত্রের বহি:প্রকাশ।
হাস্যকর বিষয় হচ্ছে প্রথমে সরকার তাকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক করেছে বলে দাবী করে, পরবর্তীতে কোন ধরণের সম্পৃত্ততা পায়নি বললেও তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। মূলত জাঙ্গীবাদের জিগির তুলে সরকার পশ্চিমাদের সহানুভূতি নিয়ে ক্ষমতাকে আরো দীর্ঘায়িত করতে চায়। এই জন্যই জামায়াতে ইসলামীর আমীরকে গ্রেফতারের নাটক মঞ্চস্থ করেছে আওয়ামীলীগ।
অথচ উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিষয়ে জামায়াতের রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। জামায়াত মনে করে উগ্রগোষ্ঠী ইসলামের নামে যেভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, ইসলামের শিক্ষা ও মূলনীতি এসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে থাকে। সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফিতনা সৃষ্টিকারী এসব কর্মকাণ্ডকে আল-কুরআনে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ বা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতির দ্বিতীয় ধারায় সুম্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- “উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হাসিলের জন্য জামায়াত এমন কোন উপায় ও পন্থা অবলম্বন করিবে না যাহা সততা ও বিশ্বাসপরায়ণতার পরিপন্থী কিংবা যাহার ফলে দুনিয়ায় ফিতনা ও ফাসাদ (বিপর্যয়) সৃষ্টি হয়।” জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি এই কর্মনীতির ওপর অটল-অবিচল থেকে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সুতরাং জামায়াতের দাওয়াত, কর্মসূচি, কর্মনীতি, আয়ের উৎস- এই সব মিলিয়ে জামায়াতে ইসলামী কিংবা তার কোন সদস্যের পক্ষে উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ কিংবা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। জামায়াতের দীর্ঘ পথ চলায় জামায়াত কিংবা এর কোন সদস্য দল কর্তৃক প্রণীত নীতি ও আদর্শের বাইরে গিয়ে কোন বক্তব্য, উগ্র আচরণ ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কোন নজীরও নেই। জামায়াত মনে প্রাণে উগ্রচিন্তা-চেতনা ও এই সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রমকে তীব্রভাবে ঘৃণা ও নিন্দা করে।
শুধু তাই নয়, রাজধানীর গুলশানে জঙ্গি হামলার যে ঘটনা ঘটে তার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে জামায়াত নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করে এবং দুর্বৃত্তদের হাত থেকে জিম্মি দেশী-বিদেশী নাগরিকদের নিরাপদ ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার আপ্রাণ চেষ্টা চালানোর আহ্বান জানায়। একই সাথে দুর্বৃত্তদেরকে যথাসম্ভব নিরস্ত্র করে জীবিত অবস্থায় আটক করা উচিত বলে মত প্রকাশ করে যাতে করে এর সাথে জড়িত ও তাদের পেছনের মদদদাতাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। জামায়াতের এই ধরনের বিবৃতি প্রমাণ করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও নৈরাজ্যের ব্যাপারে জামায়াতের অবস্থান কতটা স্পষ্ট, এই ব্যপারে জামায়াত কতটা আপোষহীন। তাছাড়া চারদলীয় জোট সরকারই জঙ্গিদের শাস্তি কাযকর করেছে। জঙ্গি হামলায় জামায়াতের তৎকালীন পিপি, এমপি প্রার্থীসহ অনেক প্রাণ হারিয়েছে।
বর্তমানে আওয়ামীলীগ সরকার একদিকে জামায়াতের নিয়মতান্ত্রিক, জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমকে পরিচালনা করার সুযোগ না দিয়ে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সর্বশক্তি নিয়োগ করে তা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। অফিস বন্ধ করে রেখেছে। অন্যদিকে উল্টো জামায়াতকেই জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সারাদেশে জঙ্গি ধরার নামে জামায়াত-শিবির ও অন্যান্য বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে হয়রানিমূলক গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে কোনভাবেই জঙ্গি দমন করা সম্ভব নয়। অধিকন্তু সরকারের গৃহীত এ পদক্ষেপ উল্টো জঙ্গীবাদকে উস্কিয়ে দেওয়ারই শামিল।
কোন অকাট্য প্রমাণ ছাড়াই সরকার ও মহল বিশেষ জামায়াতের সাথে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক আবিষ্কার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
মূলতঃ জামায়াতের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাকাতর হয়ে সরকার ও কতিপয় অপশক্তি এসব অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই জামায়াতকে জঙ্গিবাদী আখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। মনে হয় জামায়াত নেতৃত্বের সততা ও যোগ্যতাই যেন তাদের বিদ্বেষের মূল কারণ। জামায়াতের ২ শীর্ষ নেতা ৩ টি মন্ত্রণালয় পরিচালনায় যে সততার সাক্ষর রেখেছেন তা ইতিহাসে বিরল। এজন্য অধ্যাপক চার্লস বলেছেন, “আমার মতে ইতিহাসের কোনো যুগেই কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এত কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়নি, প্রশাসনের সামনে বিচার বিভাগ কখনো এতটা অসহায়ত্ব বোধ করেনি”। বেকন বলেছিলেন- “আইনের মাধ্যমে অত্যাচার করার চেয়ে বড় অত্যাচার আর নেই।” সুতরাং দেশপ্রেমিক জনগণ এ ধরনের অপপ্রচার ও অপবাদকে কোন গুরুত্বই দেয় না। তাই এবার আমীরে জামায়াতের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে তা পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়।
ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্য নাম। এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও জাতীয় রাজনৈতিক জীবনে তিনি সততা, যোগ্যতা, মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। দেশের প্রতিটি দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য যিনি সবার আগে ছুটে যান তিনি হলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জননেতা জনাব ডা. শফিকুর রহমান।
জাতির এই সাহসী সন্তান ও প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জনের পর চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মানতার কল্যাণে তিনি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন। সম্প্রতি সিলেটসহ সারাদেশে বানভাসি ও পঞ্চগড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নৌকাডুবিতে আহত ও নিহত পরিবারের বিপদে পাশে দাড়ানোর যে উদ্যোগ আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান নিয়েছেন তা সর্বমহলে প্রসংসনীয় ও অবিস্বরণীয় হয়ে থাকবে। এ সম্পর্কে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন।
সাংবাদিক রিপন দে নামে একজন তার ফেসবুক ভেরিফাইট পেইজে লিখেছেন,“নৌকাডুবিতে মৃত্যু ৭১ জনের পরিবারপ্রতি ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে জামায়াতে ইসলাম। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় নিহতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বজনদের হাতে এই অর্থসহায়তা তুলে দেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। একই সঙ্গে শোকাহত পরিবারগুলোকে সমবেদনা জানান তিনি। এখন এখানে অনেকেই বলবেন রাজনীতি । বাট রাজনীতি যদি হয় মানুষের উপকারে সেটা যে দলেরই হোক মানুষ সাপোর্ট দেবেই।”
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ডাঃ শফিকুর রহমান জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ১৯৭৭ সালে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। জননেতা ডা. শফিকুর রহমান প্রখ্যাত রাজনীতিকই নন বরং তিনি একজন খ্যাতিমান সমাজ সেবক, বলিষ্ঠ সংগঠক এবং সফল উদ্যোক্তা। তিনি একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য তিনি আমীরে জামায়াত হিসেবে ২য় বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন এবং অদ্যবধি সংগঠনের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জনসমর্থনের দিক থেকেও জামায়াতে ইসলাশী দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী ও তৃতীয় রাজনৈতিক দল। বিগত দিনে জামায়াত অত্যান্ত সাফল্যের সাথে সরকার পরিচালনায় অংশ গ্রহণ ছিল দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রের আলোচনার মুল কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিনিয়ত হামলা-মামলা, দমন-নিপিড়ন, গুম, খুন, এত কিছুর পরও জামায়াতের আমীর নির্বাচন নিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। জামায়াত নিজেদের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা শত প্রতিকুলতার মাঝে ও কিভাবে লালন করে এ নির্বাচন তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
তৃণমুল থেকে উঠে আসা দ্বীনের এই নিবেদিত প্রাণ মানুষটি এ দেশের জনগনের নিকট খুবই পরিচিত। ব্যাক্তি জীবনে তিনি বিনয়ী, অল্পেতুষ্ট, পরোকারী, স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবেই তিনি সকলের হৃদয়ে আস্থার জায়গা করে নিয়েছেন আপন মহিমায়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানিকে তিনি মনেপ্রাণে ঘৃনা করেন। তিনি একজন সাদা মনের মানুষ। তিনি জাতীর বিভেদের কালো রেখাকে উপড়ে ফেলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেশে রাজনৈতিক শিষ্টাচার যখন প্রায় শূন্যের কোটায়। তখন তার বক্তব্যের সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী ভাষা মজলুম জনতার হদয়ে আশার আলো সঞ্চারিত করেছেন। তিনি আবেগ তাড়িত নন, কিন্তু আবেগের সম্মোহনী শক্তি বিতরণ করছেন দল-মত,ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মাঝে। তাঁর বক্তব্যে গোটা দুনিয়ার মজলুম বঞ্চিত, শোষিতদের পক্ষে বলিষ্ঠ সাহসীপূর্ণ উচ্চারণ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত মূলনীতি ও ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সুশাসন ও ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণধর্মী সমাজ বিনির্মানের জন্য কাজ করছে। দেশের বিদ্যমান পরিবেশ পরিস্থিতিসহ আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেই কাঙ্খিত জনকল্যাণমূলক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জামায়াত তার রূপকল্প হিসাবে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পণা গ্রহণ করেছে। একটি ইনসাফপূর্ণ ও কল্যাণমুখী সমাজ বিনির্মাণের জন্য আজীবন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক আমীর ও মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সহ সেই সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পাঁচজনকে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিহিংসামূলকভাবে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। দুইজন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে জুলুমের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি শত্রুতা নয়’,এই নীতির ভিত্তিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো সহ বিশ্বের শান্তিকামী সকল রাষ্ট্রের সাথে সু-সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে রাষ্ট্র সমূহের সাথে সমতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। সর্বোপরি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মসহ দেশের জনগণের কাঙ্খিত উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ হবে।
আমাদের দেশের আজকের রাজনৈতিক একমাত্র সঙ্কট বৃটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার সায়মন ডানসাক বুঝেছেন; কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা বুঝেও না বোঝার ভান করছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এমন এক রাষ্ট্র যেখানে নেই কোনো ফ্রিডম, নেই কোনো গণতন্ত্র, জনসাধারণের জন্যে নেই কোনো চয়েস। এমন পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন দেয়াই চলমান সংঘাত নিরসনের একমাত্র উপায়।