আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৫তম বার্ষিকী। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো দিন। ২০০৯ সালের এই দিনে বিশ্বের ইতিহাসে পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে (বর্তমান বিজিবি) ঘটে এক মর্মান্তিক ও নৃশংস ঘটনা।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।
দেশ রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ও পদানত রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত সে-দিন থেকে শুরু হয়েছিল। বাকরুদ্ধ ৩৬ ঘণ্টার এ হত্যাযজ্ঞে জাতি হারিয়েছে ৫৭ জন মেধাবী চৌকস সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক, দুইজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ জন বিডিআর সদস্য ও ৫ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে। পিলখানায় পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তর। ঘটনার পর পিলখানা থেকে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের লাশ। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় দারুণভাবে। এ ঘটনায় সারাদেশের মানুষ আজও বিস্মিত, হতবাক। আজও উদ্ধার হয়নি এর নেপথ্য রহস্য। উন্মোচিত হয়নি মূল ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ।
তা-ই আজও থামেনি শহিদ পরিবারের কান্নার আওয়াজ। এখনো দাবি উঠছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের। কিন্তু কেউই জানে না আসলে এর শেষ কোথায়! বাংলার জনগণ কি জানতে পারবে ঘটনার পেছনের ইতিহাস?
২০১৯ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিহত সেনাসদস্যদের স্মরণ করা হয়। ‘শহিদ পরিবারবর্গ’ এবং ‘দেশ উই আর কনসার্নড’ নামক সংগঠন যৌথভাবে এ আয়োজন করে। স্বাগত বক্তব্যে নিহত কর্নেল কুদরত এলাহি রহমানের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, শহিদ পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন- কেন এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড হলো, নিহত সেনা সদস্যদের কী অপরাধ ছিল? তিনি বলেন, শহিদদের মধ্যে এমন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, যিনি ওই দিনই অথবা মাত্র এক মাস আগে অন্য কর্মস্থল থেকে বিডিআরে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের কী অপরাধ ছিল? কারাইবা এই নৃশংসতার পরকিল্পনা করেছিল?
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির অধীনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হলে এই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য হয়ত উন্মোচন হতো। তা-ই এমন একটি কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি।’ কিন্তু রিপোর্ট এখনো অগোচরেই থেকে গেল কেন?
তিনি নিহত সেনাদের স্মরণে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহিদ সেনা দিবস’ এবং দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করার দাবি জানান।
নিহত কর্নেল এম মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরিন ফেরদৌস বলেন, ‘সবার মনে ধারণা জন্মেছে, আমরা সরকারের কাছ থেকে অনেক টাকা পেয়েছি। যেখানেই যাই, সবাই আমরা কেমন আছি, কী করছি, বাচ্চারা কেমন আছে সে বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস না করে আমরা কী পেয়েছি তা জানতে চায়। এটা খুবই বিব্রতকর। আমরা যা পেয়েছি তা আমাদের স্বামীর ন্যায্য টাকাটা পেয়েছি। তার চেয়ে বেশি কিছু নয়!!
নেহরিন ফেরদৌস বলেন, তাঁরা কারও কাছ থেকে সহানুভূতি চান না। সবকিছুর ঊর্ধ্বে তাঁদের একটাই চাওয়া, এই দিনটাকে বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করা হোক। আগামী প্রজন্ম জানুক, এই দিনে এমন একটা নৃশংস ঘটনা ঘটেছিল।
মেজর মো. সালেহর স্ত্রী নাসরিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আসল ঘটনাটি জানতে চাই। এত বড় একটা ঘটনা, এর পেছনে কারা ছিল? তাদের উদ্দেশ্য কী? বিচার আদৌ কি হলো, আমরা কিন্তু কিছুই জানি না। এসব কিছু আমরা জানতে চাই। আমাদের সন্তানেরা জানতে চায়।’
মেজর মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী রিতা রহমান বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি যদি সরকার শহিদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, তাহলে হয়ত একটা কিছু পেয়েছি বলে মনে হবে। কারণ বিচার তো কী হয়েছে তা সবার দেখা। আমরা যা দেখেছি, এটা আসলে কিছু কি হলো! আচ্ছা যতটুকু দেখেছি, যা হলো তা না হয় মেনে নিলাম। মেনে নেওয়া ছাড়া এখন আর কিছু করার নেই।’
নিহত কর্নেল কুদরত এলাহি রহমানের ছেলে সাকিব রহমান বলেন, পেছনের ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো বের হয়ে আসেনি। বিচার কিন্তু তখনই হবে যখন পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা যাবে এবং তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে। তিনি বলেন, ‘চার বছর ধারে আমরা একটি বিচার বিভাগীয় কমিশনের কথা বলে এসেছি। এই কমিশন তদন্ত করে জানাবে, ঘটনাটা কেনো ঘটল, কারা ঘটাল এবং সে অনুযায়ী ফৌজদারি আইনে তাদের বিচার হবে।
সাকিব রহমান বলেন, সরকারের তদন্ত প্রতিবেদনের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে লেখা আছে, পেছনের ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু পর্দার আড়ালেই রয়ে গেছে। তাই ষড়যন্ত্রকারীদের বের করে আনার দায়িত্বটা সরকারের ওপরই পড়ে। ( সূত্র: প্রথম আলো)
সেদিনে সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের নানান ভূমিকা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যা আজও অজানাই রইলো জনগণের।
আমরাও শহিদ পরিবারের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির মাধ্যমে গোটা জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করা হোক । পিলখানা ট্র্যাজেডির মাধ্যমে একটি পদানত রাষ্ট্র বানানোর যে ষড়যন্ত্র তা আজও অব্যাহত। এই ষড়যন্ত্রের নায়ক রই আমাদের গণতন্ত্রকে হরণ করছে বারবার।
শহিদের রক্তের শপথ নিয়ে এই অপশক্তিকে জনতার মানব প্রাচীর গড়ে তুলে রুখতে হবে। ছিনিয়ে আনতে হবে শহিদের রক্তের বিনিময়ে বিজয়ের লাল কেতন।
ওরা চায় আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি,ধ্বংস করে দিতে। ওরা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় আমাদের রাজনৈতিক অধিকার,ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার। ওরা মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করে দেশকে বিপথগামী করতে।
দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ইসলাম ও গণতন্ত্র রক্ষায় আজকের এই দিনে সবাইকে আবার শপথবদ্ধ হয়ে সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
এই দিনে যারা নিহত হয়েছেন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। আহত ও পঙ্গুত্ববরণ কারীদেরকে সুস্থ করে দিন। শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য্য ধারণ করার তাওফীক দান করুন। আমিন।