(১ পর্ব)
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিনি সারা বিশ্বের প্রতিপালক। দুরুদ ও সালাম মানবতার মহান বন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আমাদের প্রিয় নবী রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। মানব জাতি এক কঠিন দুর্যোগের মধ্য দিয়ে সময় অতিক্রম করছে। যারা দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছে আল্লাহ তা’আলা সেই ঈমানদার ভাই-বোনদেরকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। যারা আক্রান্ত আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে সুস্থ করে দিন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
সম্মানিত ভাই ও বোনেরা। আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
মানুষের দুঃখ, কষ্ট, বেদনাকে কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। কারন তা এমন এক অব্যক্ত জিনিস যা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ভিন্ন হয়। এজন্য বলা হয় মানুষের কষ্ট দেখাটাই বড় কষ্টের। যারা প্রকৃত মানুষ তারা ব্যাথা অনুভব করেন হদয় দিয়ে। করোনায় গোটা দুনিয়া আজ স্তদ্ধ! মৃত্যুর মিছিল প্রতি দিনেই দীর্ঘ হচ্ছে! মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে এগিযে যাচ্ছে লক্ষ্যের দিকে—। থমকে গেছে কোলাহল, দাম্ভিক, ক্ষমতাশালী আজ বিত্তবানদের অহংকার! প্রতাপশালী আর বিত্ত বৈভব আর প্রাচুর্যের অধিকারীরাও বলে উঠছে! আকাশের মালিকেই জানেন কি হতে যাচ্ছে! সবাই সমস্যার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে কিন্তু কোন কুলকিনারা খুঁজে পাচ্ছেনা! আজ কামান-গোলা বারুদ আর গুলির আওয়াজ নেই কিন্তু প্রতিমুহুর্তে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। মা জানেনা সন্তানের মৃত্যুর খবর! সন্তান থাকতে পারেছেনা পিতা-মাতার জানাযায়! সন্তানের দাফন হচ্ছে পিতা-মাতার অনুপস্থিতিতে। সবাই সবার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে!। এ যেন কেয়ামতের সেই দৃশ্য!। আল্লাহ বলেন-সেদিন মানুষ পালাতে থাকবে নিজের ভাই, বোন, মা, বাপ, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের থেকে। তাদের প্রত্যেকে সেদিন এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে যে , নিজের ছাড়া আর কারোর কথা তার মনে থাকবে না। (সুরা আবাসা-৩৪-৩৭)
হয়ত কোন দিন খুজে পাবেনা আপন জনের কবরের হাদিসটুকু ও ! কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-”ছবি আমার বুকে বেধে পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে ফিরবে মরু কানন গিরি সাগর আকাশ বাতাশ চিরি সেদিন আমায় খুজবে বুঝবে সেদিন বুঝবে”। পৃথিবীর এই বোবা কান্নার আওয়াজ আমাদের হৃদয়কে ভেঙে খাঁন-খাঁন করে দিচ্ছে। কবি মতিউর রহমান মল্লিকের ভাষায় আজ বলতে হয়- পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়। মরণ একদিন মুছে দেবে সকল রঙ্গিন পরিচয়… মিছে এই ক্ষমতার দন্দ, মিছে গান কবিতার ছন্দ। মিছে এই অভিনয় নাটকের মঞ্চে, মিছে এই জয় আর পরাজয়”।
পৃথিবীর তথাকথিত ত্রানকর্তারাই আজ ধরাশায়ী! কে এগিয়ে আসবে কাকে রক্ষা করতে?। কে বাঁচাবে বিশ্বমানবতাকে? নিরুদ্দেশ গন্তব্যে আজকের পৃথিবীর মানুষের এই যাত্রা–। জ্ঞান-বিজ্ঞান আর তথ্য প্রযুক্তির শীর্ষে যাদের বাস তারাও আজ বার বার আকাশের প্রানে তাকাচ্ছে—!। পারমানবিক বোমা, মিসাইল, নভোচারী, কামান ড্রোন সবই এখানে বোতা। এইতো কয়দিন আগে বিশ্ববাসী এগুলোর ব্যবহার দেখেছে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন এসব কোনই কাজে আসছেনা। সবাই আজ দারুন আসহায়! পৃথিবীর মোড়লদের আজ বড়ই ক্ষমতাহীন লাগছে!। এবার সবার আগে করোনার আক্রমনে লণ্ডভণ্ড উন্নত রাষ্ট্রগুলো। এর শেষ যেন সবারই অজানা।
হ্যাঁ, একজনই আমাদের রক্ষা করতে পারেন। তিনি হচ্ছেন আমার-আপনার আমাদের সকলের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। যিনি করোনা সহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। “ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শ্ইায়িন কাদির” “পৃথিবী, আকাশসমূহ ও সমগ্র জাতির ওপর রাজত্ব আল্লাহ্রই জন্য নির্ধারিত এবং তিনি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী” (মায়েদা ১২০) সেই সুপ্রিমপাওযার আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতা নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে। ফিরে যেতে হবে তাঁরই দিকে। সু-উচ্চকন্ঠে বলতে হবে ” ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” আল-কুরআনে বলা হয়েছে- বলোঃ হে আল্লাহ ! বিশ্ব জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্জিত ও হেয় করো কল্যাণ তোমরা হাতেই নিহিত। নিসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী। (৩:২৬) এখন যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন তাহলে তারা তো আপনার বান্দা আর যদি মাফ করে দেন তাহলে আপনি পরাক্রমশালী ও জ্ঞানময়। (মায়েদা ১১৮)
এ সময়ে আমাদের দেশে আজ কি হচ্ছে তা মিডিয়া ও বিভিন্ন মাধ্যমে সবাই জানতে পারছেন। বাংলাদেশের জনগন ও এমনি এক কঠিন শঙ্কার মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। সামনে কি আপেক্ষা করছে তা আল্লাহ ভালো জানেন। তবে সর্ব পর্যায়ে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। মানবতার এই ক্রান্তিকালে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা একমাত্র আল্লাহই দিতে পারেন এটাই সত্য। আর জমিনে যারা ওসিলা হিসেবে জীবন বাজি রেখে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের প্রিয় ডাক্তাররা। কিন্তু তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য সরকার সামান্য মাস্ক, পিপিই ব্যবস্থা করতে না পারা দুর্ভাগ্যজনক!! এটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক ও অপমান কর। দেশ জাতি ও মানবতার বন্ধু আমাদের প্রিয় ডাক্তার ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় রাষ্ট্রীয় আয়োজনে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। মহান মাবুদের দরবারে দোয়া করি আল্লাহ্ তাদেরকে রহমতের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখুন।
একই সঙ্গে যারা দিন আনে দিন খায়-এমন শ্রমিক, নিঃস্ব ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের খাদ্যসামগ্রীসহ অন্যান্য উপকরণ নিশ্চিত করতে খুব বেশী উদ্যোগ নেই রাষ্টের। অথচ¡ রাষ্ট কি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেছ?। শ্রমিকদের ছুটি নিয়ে ঘটে গেল তেলেসমাতি। ”করোনার ঝুঁকির মধ্যেও পোশাক কারখানা বন্ধ করতে চাননি শিল্পমালিকেরা। তাতে সায় ছিল সরকারেরও। মূলত মালিকদের পাশাপাশি সরকারের শ্রম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তহীনতা ও সমন্বয়হীনতার কারণেই ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব না মেনে ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক ঢাকা ও আশপাশের শিল্পাঞ্চলে ফিরেছেন”। (সুত্র প্রথম আলো) এটি দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। এটি সাধারণ শ্রমিকদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনির শামিল। অবিলম্বে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার কার্যকর রেশনের ব্যবস্থা করবে এটি সকলের দাবি। তাছাড়া বিত্তবানরা অসহায় মানুষের প্রতি তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে এটাই সময়ের দাবি।
লেখক- সহকারী সম্পাদক
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা
চলবে——–