সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। সেই মাখলুক-ই এখন সবচেয়ে অপমানিত, লাঞ্ছিত, মূল্যহীন। বনে-জঙ্গলে ডোবায়, কল-কারখানায়, রাস্তা-ঘাটে, ভোটকেন্দ্রে, আদালতে, বাসা-বাড়ীতে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ! মানুষের জান-মালের নেই কোন নিরাপত্তা। সতিত্ব ও সম্ভ্রম হারাচ্ছে নারী-শিশুরাও। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার হয়েছে কোমল-মতি নিস্পাপ শিশুরা। নারী-শিশুর নির্যাতন-ই বলে দেয় আমাদের সমাজ কত অমানবিক, ভয়াবহ ও নিষ্ঠুর পরিস্থিতি বিরাজমান। সরকারী দলের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিদিনই ঘটছে নতুন-নতুন অপরাধ! অধিকাংশ হত্যা-গুম-খুন হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে। অথচ রাষ্ট্র নির্বিকার! রাষ্ট্র-ই এখন উৎপীড়কের ভূমিকারত। এভাবে কোন সভ্য সমাজ চলতে পারে কি? তাহলে আমরা কি গন্তব্যহীন পথে-ই এগিয়ে চলেছি!
ঘরে-বাহিরে আজ কোথায়ও নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিন লাশের মিছিল। ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে সরকার যেন গোরস্থানের দিকেই এগিয়ে চলছে দূর্বার গতিতে। দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় তা প্রচারিত হচ্ছে। দেশে এখন নুনের চেয়ে খুনের দাম অনেক কম। নিহতদের বেশীর ভাগই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী। বাদ যাচ্ছেনা কোন শ্রেণী-পেশার মানুষ। হত্যা, গুম, অপহরণের শিকার সন্তানের জন্য মা-বাবা হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আর চোখের পানি ঝরছে। এমন পরিবারের সংখ্যা এখন হাজার-হাজার।
রাতের অন্ধকারে বন্দুকের একটি আওয়াজ মানেই অজানা এক আতংক। না জানি ক্রসফায়ারের নামে ঝড়ে পড়লো কোন তাজা প্রাণ? আজীবনের জন্য নিভে গেল কোন উজ্জল প্রদীপ! এটি কোন সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায়? এ যেন কোন মায়ের নাড়ী ছেড়া সন্তানের বুকে গুলি যাজরা করা মৃত লাশের খবর!। কোন স্ত্রীর বিধাবা হওয়ার এক মহা-দু:সংবাদ। এতিম সন্তানেরা পৃথিবীতে বাবা বলে আর কাউকে ডাকতে না পারার পরিসমাপ্তি। কিন্তু এর কোন জবার আছে কি আমাদের রাষ্ট্রের কাছে? ক্রসফায়ারের খবর শুনলেই যেন বুক কেঁপে উঠে। প্রিয়জনের সন্ধানে হাসপাতালের মর্গে কিংবা অজ্ঞাতনামা লাশের মিছিলে খোঁজাখুজি। ঝিনাইদাহ’র এ জনপদে লাশের মিছিল এখন অনেক দীর্ঘ। মাত্র কয়েক দিনে প্রাণ হারালো ছাত্রশিবিরের চার মেধাবী ছাত্র, এর কি নেই কোন উত্তর? নেই কোন সমাধান?
বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকরা গুমÑখুনের শিকার হওয়া আওয়ামী দুঃশাসনের নতুন সংস্করণ। রাবি, চবি ভিসিরা যখন মিডিয়ার সামনে বলেন, “কখন যে দেখব আমাদের ঘাড়েও মাথা নেই” তখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কত খারাপ তা উপলদ্ধি করতে কারোই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। গুম-খুনের শিকার অনেকেই আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেরা ছাত্র। যারা অনেকে হয়তো হতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা রাষ্ট্রের উজ্জল কোন নক্ষত্র। একটি বুলেটের আঘাতে চুরমার করে দিচ্ছে সকল স্বপ্নকে। আমাদের কাছে একটি মৃত্যুর খবর কিংবা একদিনের জানাযায় উপস্থিতি। কিন্তু যারা আপনজন হারানোর বেদনা বয়ে বেড়ান আজীবন, তারা বুঝে আপনজন হারানোর বেদনা কত কঠিন, কত মর্মান্তিক! তাহলে প্রশ্ন আমরা কি ফিলিস্তিন কিংবা আফগান রাষ্টের নাগরিক? এখানে কি যুদ্ধ চলছে?
কিন্তু সন্তানহারা মা-বাবা’র আর্তনাদ, স্বামী হারা বিধবা স্ত্রীর নি:শব্দ কান্না, বাবা হারা এতিম সন্তানের আর্তচিৎকারের আওয়াজ কি আমাদের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ-র্যা বের কর্তাব্যক্তিরা শুনছেন? আপনারা যখন বলেন দেশে শান্তির সুবাতাস বইছে! আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত দেশের চেয়েও ভালো! কি অদ্ভুত! সেলুকাস! এ পৃথিবী। ক্ষমতার মোহ কত অন্ধ-বধির আর বিবেকহীন করে তুলেছে আওয়ামী লীগকে!
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে আজ লক্ষ-লক্ষ মায়ের সন্তানেরা বাড়ী-ঘর ছাড়া। প্রতিটি মুহুর্তে শাহাদাতের মিছিল অনেক দীর্ঘ হচ্ছে। আহাজারি, আর্তনাদ, করুণ চাহনী, অব্যক্ত বেদনা বাংলার আকাশ বাতাসকে প্রকম্পিত করছে। বৃদ্ধ বণিতা এমনকি মায়ের পেটের শিশুও রেহাই পায়নি জালেমের বুলেটের আঘাত থেকে। মজলুমেরা রাত জেগে-জেগে আল্লাহর দরবারে চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছেন। অনেকে উপার্জনক্ষম বাবা-ভাইকে হারিয়ে এখন প্রায় পাগল পারা। অনেক খেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র সম্বল হারিয়ে এখন পথের ভিখারী। আবার গুম হয়ে যাওয়া আত্মীয় স্বজনেরা কোথায় ও লাশের খবর পেলেই ছুটে যান মর্গে অথবা হাসপাতালে। লাশটা পেলে অন্তত কবরের পাশে দাঁড়িয়ে যেন দোয়া করতে পারেন পেতে চান অন্তত সেই সুযোগটুকু। দেশে এখন নেই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি!
বাংলাদেশে এখন বেওয়ারিশ লাশের স্তুপ দিন দিন বাড়ছে। এটি মানবতার জন্য বড়ই অবমাননাকর। কিন্তু অনেকের ভাগ্যে লাশটিও জুটছে না। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শিবির নেতা অলি উল্যাহ আর মোকাদ্দাস, চৌধূরী আলম আর ইলিয়াস আলী আজও ফিরেনি। এ রকম হাজারো গুম-খুন, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, পঙ্গু, হাতহারা-চোখ হারাদের সারি এখন অনেক দীর্ঘ। কিছুতেই যেন তা আর থামছেনা। দেশীয়-আন্তর্জাতিক কোন সমালোচনাই যেন আওয়ামী শাসক গোষ্ঠী তোয়াক্কাই করছেনা। তাহলে এর অবসান আসলে কবে হবে? কবে বন্ধ হবে এই কান্নার আওয়াজ? কবে বন্ধ হবে হুংকার আর নিষ্ঠুরতা।
আজকের সমাজে গণহত্যাকারী, খুনী, কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারী, সশস্ত্র সন্ত্রাসী, দূর্নীতিবাজ, লম্পট, চরিত্রহীনরা যেন সাধু! আর নিরাপরাধীদেরকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে মিডিয়া ট্রায়াল আর বিকৃত উপস্থাপনার মাধ্যমে রাজনৈতিক বিবেচনায় বানানো হচ্ছে জঘন্য আপরাধী! এজন্য প্রয়োজন হয়না তথ্য-উপাথ্য আর অকাট্য প্রমানাদির। প্রয়োজন পড়েনা কোন নিরপেক্ষ তদন্তের। গোয়েবলসীয় সূত্রের আলোকে চলছে সত্যপন্থীদের বিরুদ্ধে এই অসত্য প্রচারণা। বিরোধী মতকে সন্ত্রাসের দোসর বলে প্রচারণা সরকারের একটা মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছে।
কি সেলুকাস এ পৃথিবী! কি অদ্ভুত আর বিষ্ময়কর আমাদের রাজনীতি! কত নিষ্ঠুর, নোংরা, কলুষিত, ক্ষমতার মোহে দিকভ্রান্ত আওয়ামী লীগের এই নেতিবাচক শিষ্টাচার বহির্ভূত অপরাজনীতি! ধিক আজকের সমাজের এই ঘৃনিত বিষবাস্পকে। ধিক্ আওয়ামীলীগের এই অমানবিক, ফ্যাসিস্ট চরিত্রকে। বি. সি. ওয়াই বলেছে- “ক্ষমতা সবচেয়ে বড় মদের নেশার মতো। যাকে একবার পেয়ে বসে তাকে জীবনে শেষ করে দেয়”। আওয়ামী লীগ আজ অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার নেশায় মত্ত।
আল্লাহ তায়ালা যখন কোন জনগোষ্ঠীকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে আরও পবিত্র ও কলুষমুক্ত করার লক্ষ্যে পরীক্ষায় ফেলেন। যারা আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকে ও ধৈর্য্যধারণ করে আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট থাকেন। নবীজি বলেছেন, “যখনই কোন মুসলমান কোন রকমের মানসিক কষ্ট, শারীরিক আঘাত বা রোগ, দুঃখ বা বিষাদ ভোগ করে এবং তাতে ধৈর্য্য ধারণ করে তখন তার ফলে আল্লাহ তার গুণাহগুলো মাফ করে দেন, এমন কি তার গায়ে একটা কাটাও যদি ফুটে তবে তাও তার পাপ মোচনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (বুখারী, মুসলিম)
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তান্ডব, বিডিয়ার হত্যাকান্ড, শাপলা চত্বর ট্রাজেডি, হয়ে আজও প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে মানুষ। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে “যে অন্যায়ভাবে একজন মানুষকে হত্যা করলো, সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করল।” তবিরানীতে হজরত মুয়াজ বনি জারুন (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস যাতে বলা হয়েছে যে, ইসলামের রাজনৈতিক অবস্থা যখন বিকৃত হয়ে যাবে, তখন বিপথগামী শাসকরা কর্তৃত্বশীল হবে এবং তারা সমাজকে ভ্রান্ত পথের দিকে নিয়ে যাবে। তাদের নির্দেশ মেনে চললে জনগণ গোমরাহ হয়ে যাবে। আর তাদের নির্দেশ অমান্য করলে তারা তাদের হত্যা করবে। এ কথা শোনার পর লোকেরা জিজ্ঞেস করলো তারপর তারা কি করবে, তিনি বললেন : সে সময়ে তোমাদেরকে হযরত ঈসার সহচরগণ যা করেছিল তাই করতে হবে। তাদেরকে করাত দিয়ে চিড়ে ফেলা হয়েছে। শূলে চড়ানো হয়েছে, তবুও তারা বাতিলের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি।
কিন্তু শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না। শহীদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে বিজয় আসবেই।
আওয়ামীলীগ আজ শহীদ রক্তের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। ইনশাল্লাহ কোন ষড়যন্ত্রই করে তারা কিনার খুঁজে পাবেনা। অসংখ্য শহীদের মায়েরা তাদের প্রিয় সন্তান হারিয়ে প্রায় পাগলপারা। তোমরা আর কেদোঁনা মা। ‘শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিজয় আসবেই।